Header Ads

Header ADS

আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক #ইবনে_সিনা জীবনি

 


আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক #ইবনে_সিনা! ❤️

যিনি মাত্র ১০ বছর বয়সে কোরআনে হাফেজ হয়েছিলেন!


🔹নাম- আবুল আলি ইবনে সিনা।

🔹জন্ম-আনুমানিক ৯৮০ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বরে এবং মৃত্যু-১০ ডিসেম্বর ১০৩৭।

🔹বাসস্থান- উজবেকিস্তানের বিখ্যাত শহর বোখারার নিকটবর্তী আফসানা গ্রামে।

🔹জাতীয়তা- পারস্য।


🔶শিক্ষা জীবন- 


শৈশবে ইবনে সিনা অত্যন্ত মেধাবী ও প্রখর স্মৃতিশক্তির অধিকারী ছিলেন। মাত্র দশ বছর বয়সেই তিনি পবিত্র কোরআনের ৩০ পারা মুখস্ত করেছিলেন। এছাড়া তিনজন গৃহ শিক্ষকের নিকট তিনি ধর্মতত্ত¡, ফিকাহ্, তাফসীর, গণিত শাস্ত্র, দর্শন, ন্যায়শাস্ত্র এবং এমনকি জ্যামিতি বিষয়ে অধ্যায়ন শুরু করেন। এভাবে তিনি মাত্র ১৭ বছর বয়সে সেসময় প্রচলিত সকল জ্ঞান অর্জন করতে পেরেছিলেন।

 

ইবনে সিনা মাত্র ১৭ বছর বয়সে চিকিৎসক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এসময় তিনি বুখারার সামানীয় সুলতান নূহ বিন মুনসুরের (৯৭৬ ৯৯৭) ব্যক্তিগত চিকিৎসক হিসেবে নিয়োজিত হন।

 

জ্ঞান সাধনায় তাঁর মনোনিবেশ ছিল গভীর। ইউক্লিড ও টলেমির মতো বিজ্ঞানীর লেখাও অধ্যায়ন করেছিলেন। তারপর এরিস্টটলের ‘মেটাফিজিক্স’ অধ্যায়ন করেছিলেন। তাছাড়া এরিস্টটলের দর্শন শাস্ত্রও ছিল আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু।

 

বলা হয়ে থাকে ইবনে সিনা সাহিত্য, ধর্মতত্ত¡, ইউক্লিডের জ্যামিতি, এরিস্টটলের দর্শন, জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং বীজগণিতে বুৎপত্তি লাভ করেন। মূলত কিডোর ইচ্ছায় তাঁকে আইন শাস্ত্রে অধ্যায়ন শেষে আঠার বছর বয়সে গণিত ও চিকিৎসাশাস্ত্র অধ্যায়ন করেন। এতে তাঁর যথেষ্ট কৃতিত্বের পরিচয় পাওয়া যায়। এছাড়া দর্শন শাস্ত্রেও তিনি অধ্যায়ন করেন। তখনকার দিনে তিনি ‘হাকিম’ অর্থাৎ প্রজ্ঞাবান উপাধিতে ভূষিত হন।

 

ইবনে সিনার জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। বুখারার সুলতান মাহমুদ এক কঠিন রোগে আক্রান্ত হওয়ায় বহু নামকরা চিকিৎসক আসেন তাঁকে চিকিৎসা করতে। কেউ পারলেন না তাঁর রোগ নির্ণয় করতে। এ মুহূর্তে তরুণ ইবনে সিনা স্বেচ্ছায় রাজ দরবারে গিয়ে রাজার চিকিৎসার জন্য অনুমতি প্রার্থনা করেন। সহসাই তিনি অনুমতি পেলেন। ইবনে সিনার চিকিৎসার গুণে অতি অল্পদিনের মধ্যে সুলতান আরোগ্য লাভ করলেন। সুলতানও তাঁর প্রতি খুশী হলেন এবং চাইলেন তাঁকে পুরস্কৃত করতে। এ সময় ইবনে সিনা সুলতানের প্রিয় এক বিরাট গ্রন্থাগারে এসে পড়াশোনা করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করলেন। বরং সুলতান তাঁর উপর সমগ্র গ্রন্থাগারের ভার অর্পণ করলেন।

 

হঠাৎ একদিন এই গ্রন্থাগারে আগুন লেগে সমস্ত বই নষ্ট হয়ে যায়। বিরোধীরা সুলতানের নিকট প্রকাশ করলেন এটি ইবনে সিনার কাজ। তারা বললেন, ইবনে সিনা বইগুলো কন্ঠস্থ করে নিয়ে ইচ্ছে করেই আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন। কানপাতলা সুলতান এ কথায় বিশ্বাস স্থাপন করলেন। এবং ইবনে সিনাকে বিতাড়িত করলেন। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো অনেকগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত ছিল। এই ক্ষুদ্র রাজ্যের রাজাগণ জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার প্রতি আগ্রহশীল হয়ে উঠেছিলেন। আর এসব রাজ্যের রাজাগতণ চাইতেন রাজসভায় বড় বড় পন্ডিত রাখতে। ইবনে সিনার তেমন অসুবিধা হলো না। তিনি বুখারা পরিত্যাগ করে খরজমে গেলে সেখানকার সুলতান তাঁকে রাজচিকিৎসক নিয়োগ করলেন।

 

খরজমের রাজসভায় বহু গণ্য-মান্য ব্যক্তিবর্গ ছিলেন। প্রখ্যাত ঐতিহাসিক, বিজ্ঞানী ও দার্শনিক আলবেরুনী যিনি সুলতান মাহমুদের সঙ্গে ভারতবর্ষে এসেছিলেন এবং তৎকালীন ভারতের ইতিহাসকে লিপিবদ্ধ করেছিলেন। একদিন সুলতান মাহমুদের কর্ণগোচর হয় ইবনে সিনা, আলবেরুনী প্রভৃতি পন্ডিতের পান্ডিত্যের খ্যাতি। তিনি খরজমের সুলতানের কাছে তাঁরই সভায় প্রেরণের দাবী করলেন। আর মাহমুদের দাবীকে উপেক্ষা করতে পারলেন না খরজমের শাসক। তিনি পন্ডিতদের সেখানে প্রেরণ করলেন। কিন্তু ইবনে সিনা কেমন যেন ঘৃণাবোধ করায় সুকৌশলে নিজেকে মুক্ত করে পালিয়ে গেলেন।

 

কিছুদিন অগোচরে থাকার পর ইবনে সিনা একদিন উপস্থিত হলেন ইরানের রাজসভায়। সুলতান তাঁর পূর্ণ পরিচয় পেয়ে খুব আনন্দিত হলেন। সেই সঙ্গে তাঁকে সভাপন্ডিত পদ দান করলেন। এদিকে সুলতান মাহমুদ এত সহজে হার মানার পাত্র ছিলেন না। গুপ্তচরের মুখে সংবাদ পেয়ে ইবনে সিনাকে বেঁধে আনার নির্দেশ দিলেন।

 

এবারও ইবনে সিনা পালিয়ে গেলেন হামদানে। সেখানে তিনি প্রধান উজিরের পদ লাভ করলেন। এখানে তিনি সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে দিনাতিপাত করলেন। কিন্তু এখানে সুখ বেশিদিন স্থায়ী হলো না। এক বিদেশীর আধিপত্য দেখে রাজপুরুষেরা ঈর্ষান্বিত হয়ে উঠলেন এবং ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হলেন। এই পর্যায়ে ইবনে সিনা বিরক্ত হয়ে উজিরের পদ পরিত্যাগ করে চলে গেলেন ইস্পাহানে।

 

মাত্র ২১ বছর বয়সে ইবনে সিনা বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য বিষয়ে গ্রন্থ রচনা শুরু করেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানে তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘আল-কানুন ফিত-তিব’ ৫ খন্ডে বিভক্ত। এ বিষয়ে তিনি আরো ১৫টি গ্রন্থ রচনা করেন। ইবনে সিনার ‘আল-কানুন ফিত-তিব’ গ্রন্থটি প্রাচ্য-প্রাশ্চাত্যের অত্যন্ত প্রভাবশালী গ্রন্থ হিসেবে গণ্য করা হয়। একাদশ শতাব্দী হতে ১৭’শ শতাব্দী পর্যন্ত এ গ্রন্থটির ল্যাটিন অনুবাদ ইউরোপের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল প্রতিষ্ঠানসমূহে পাঠ্য বই হিসেবে পড়ানো হতো। ইউনানী চিকিৎসায় এর অবদান উল্লেখ করার মতো। ইবনে সিনা হলিস্টিক মেডিসিনের প্রণেতা। তিনি মানুষের চোখের সঠিক এনাটমির বর্ণনা দেন। তিনি মেনিনজাইটিস রোগও প্রথম শনাক্ত করেন। তাঁর আরেকটি বিখ্যাত গ্রন্থ ‘কিতাব আল-শিফা’ যা ২০ খন্ডে সমাপ্ত। তাঁর জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ ‘কিতাব আল-ইশারাত’।

 

ইবনে সিনার ‘আল-কানুন ফিত-তিব’ গ্রন্থ সর্ম্পকে A.C. Crombie বলেন, “It say many Latin editions, fifteen during the last thirty years of the fifteenth century and farther twenty during the sixteenth century. Several more were printed in seventeenth century.” কানুনকে বলা হয় মেডিকেলের বাইবেল। এক্ষেত্রে কথা প্রণিধাতনযোগ্য, “Canon remained a Medical Bible for a longer period than any other work.”

 

ইবনে সিনা গ্রিক, রোমান, ভারত ও চীনা চিকিৎসা পদ্ধতির মূল নির্যাস সংগ্রহ করে চিকিৎসা শাস্ত্রের এই বিখ্যাত গ্রন্থের দ্বিতীয় খন্ডে ৭৫০টি গুল্ম, প্রাণীজ ও খনিজ ঔষুধের বর্ণনা দেন। এর মধ্যে অনেকগুলো ঔষুধ এখনও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। পঞ্চম খন্ডের ৮০০ পরিচ্ছেদে প্রত্যেকটি ঔষুধের পরিচিতি, ব্যবহারের পরিমাণ, কার্যকারিতা, কোন্ কোন্ রোগে কোনটি ব্যবহার্য, বিকল্প ঔষুধ ইত্যাদির বিষদ বিবরণ প্রদান করেন। উল্লেখ্য, প্রথম খন্ডে Physiology এবং Hygiene এর মূলনীতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তৃতীয় খন্ডে প্রত্যেক অঙ্গ-প্রতঙ্গের রোগ, সেগুলোর Symptop, Diagnosis, Prognosis, Etilogy সহ চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করেছেন। চতুর্থ খন্ডে জ্বর, কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া, খাদ্যের অনিয়ম, ক্রোধ, ভয়, বেদনা, প্রদাহ, পচন, শারীরিক রসের গোলমাল, মহামারী, বসন্ত, যক্ষ্মা, ফোঁড়া, কুষ্ঠ, ঘা, হাড়ভাঙ্গা, আলসার, চুল, নখ, চর্ম ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। মোটকথা, এ গ্রন্থে সকল রোগ-ব্যাধী সম্পর্কে বিষদ আলোচনা স্থান পেয়েছে।

 

ইউরোপে চিকিৎসা বিজ্ঞানে ইবনে সিনার প্রভাব অসামান্য। এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটেনিয়াতে টমাস ক্লিফোর্ড বলেন, ইবনে সিনার ‘কানুন’ হিপোক্রাটস ও গ্যালেনের কৃতিত্বকে অতিক্রম করেছে। কয়েক শতাব্দী ধরে ইউরোপের চিকিৎসা শাস্ত্রের এই গ্রন্থটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।

 

🔶অন্যতম অবদানসমূহঃ


১. তাঁর বিখ্যাত চিকিৎসা বিষয়ক গ্রন্থ ‘আল-কানুন ফিল-তিব’;

২. শল্য চিকিৎসার ক্ষেত্রে তাঁর কালজয়ী অবদান।

 

জীবনের শেষদিন পর্যন্ত বিজ্ঞানী ইবনে সিনা ইস্পাহানে কাটিয়ে দিলেন। বিভিন্ন বিষয়ে তিনি ৪৫০টি গবেষণা গ্রন্থ লিখেছিলেন। ইবনে সিনা বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় মৌলিক অবদান রাখলেও তাঁর সুনাম ও খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে চিকিৎসাবিজ্ঞানে। আরবরা তাঁকে অভিহিত করেছিলেন আল-শায়খ আল-রাঈস তথা জ্ঞানীকুল শিরোমণি হিসেবে। সমসাময়িককালে তিনি ছিলেন শ্রেষ্ঠ দার্শনিক ও রাজনীতিজ্ঞ।


- ✍️ বিশ্বসেরা ১০০ বিজ্ঞানী বই থেকে নেয়া।

No comments

Theme images by Barcin. Powered by Blogger.